উদীচীর জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিভাগীয় পর্ব সম্পন্ন
উদীচীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চ ২০১৭ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করতে যাচ্ছে “নবম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’২০১৮”। উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন-এর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত এবারের উৎসবের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- “ঐক্যের সুরে বাঁধো সাম্যের গান”। গত ১৬ মার্চ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতার ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেটসহ বিভাগীয় পর্ব। ঢাকা বিভাগীয় প্রতিযোগিতা ওইদিন সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরীর সেমিনার কক্ষে শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগিতা। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও দলীয়- এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। একক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনুর্ধ্ব-১২ বছর বয়সীরা ‘ক’ বিভাগে, ১২ থেকে অনুর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীরা ‘খ’ বিভাগে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রতিযোগী ‘গ’ বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। দলীয় প্রতিযোগিতা (‘ঘ’ বিভাগ)-এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচজন শিল্পীর অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয় ছিল। এ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাওজাল, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত গীতিকার সুরকার ও শিল্পী শাহীন সরদার এবং বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী সোহানা আহমেদ।
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে ছিল সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব। উদীচী ঢাকা বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক শিবাণী ভট্টাচার্য্য-এর সভাপতিত্বে এ পর্বে আলোচনা করেন তিন বিচারক, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি অমিত রঞ্জন দে। এরপর শুরু হয় চারটি বিভাগের প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিভাগীয় পর্বে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে শেহের মাহমুদ স্মিতা, আর দ্বিতীয় হয়েছে সারারা জান্নাত অর্পিতা, তৃতীয় হয়েছে অর্পিতা সেন ত্রপা। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে সুরাইয়া আক্তার ঊর্মি, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে মিতিমা মÐল ও তৃতীয় হয়েছে বৃষ্টি শীল। ‘গ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন লিজা রায়। এ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন অনুপমা সরকার। তৃতীয় স্থান পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য্য। আর দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে নারায়ণগঞ্জের যোদ্ধা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে উদীচী মিরপুর শাখা এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে স্বপ্নবীণা শিল্পকলা বিদ্যালয়। আগামী ২৮ মার্চ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ীরা।
গণসঙ্গীতের প্রচার, প্রসার এবং একে একটি স্বতন্ত্র সঙ্গীতের ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিবছর গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে উদীচী। আগামী ২৮ মার্চ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। এর আগে দেশে ও বিদেশে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা অংশ নেবেন বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। সেখানে যারা বিজয়ী হবেন তারা ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। বিভাগীয় পর্যায়ে একক বিভাগগুলোর প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এবং দলীয় বিভাগে শুধুমাত্র প্রথম স্থান অধিকারী দল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
প্রগতিশীল গণচেতনা সম্পন্ন জাগরণমূলক গান, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দু:খ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পন্ন সচেতনতামূলক গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গান, স্বাধীনতা সংগ্রামের গান, সমাজের অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন অবসানের দিক নির্দেশনামূলক গান, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, যুদ্ধবিরোধী-স্বৈরাচার বিরোধী গান, সা¤্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী গান, বিশ্ব শান্তির পক্ষে গান, শোষণের বিরুদ্ধে গান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গানকে গণসঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে রচিত ও সুরারোপিত নতুন গণসঙ্গীতসমূহ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। স্থান-কাল ভেদে গণসঙ্গীতের ভিন্নতর ব্যাখ্যা থাকলেও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে উলি¬খিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হচ্ছে।