ডেস্ক রিপোর্ট : এবার স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে পানির দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে লবণের মজুদদারদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করায় চামড়া সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। পচে যাচ্ছে চামড়া। যদিও সরকার বলছে, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই বরং লবণ অনেক উদ্বৃত্ত আছে।সদ্য শেষ হওয়া লবণ মৌসুমে দেশে প্রায় ১৫ লাখ টন লবণ উত্পাদন হয়েছে।
সারা বছর ব্যবহার করে আগের উদ্বৃত্তসহ বর্তমানে দেশে ১২ লাখ টনেরও বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। তবে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান লবণের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিতেই এ অবস্থা তৈরি করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী বলছেন, গত মে মাসে উত্পাদনের মৌসুম শেষে আয়োডিন ছাড়া প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) লবণ ৭০০-৭০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে লবণের দাম বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। আর ঈদে দিন থেকে দাম আরো বেড়ে দেড় হাজার টাকা হয়ে গেছে। লবণের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সরকার লবণের দাম বাড়ায়নি। অথচ চাহিদ বেশি থাকায় লালবাগের একটা সিন্ডিকেট কোনো কারণ ছাড়াই লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর লালবাগের পোস্তার কাজী শাহজাহান অ্যান্ড সন্সের মালিক কাজী মোহাম্মদ সোহেল লবণের দাম বিষয়ে বলেন, ঈদের আগে ৭৫ কেজির এক বস্তা লবণের দাম ছিল ৯৪০ টাকা। অথচ ঈদের দিন থেকে সেই লবণের দাম দেড় হাজার টাকা হয়ে গেছে। প্রতি বস্তা লবণে দাম বেড়েছে ৫৬০ টাকা। ঈদের পরে সিন্ডিকেটের কারণে আমরা সঠিক সময়ে লবণ পাইনি। এতে এবছর আমার ১০ লাখ টাকার চামড়া পচে গেছে।
পোস্তার আরেক আড়তদার মোহাম্মদ শাহিদ বলেন, আমি বেশি দাম দিয়েও লবণ পাইনি। আমাদের লাখ লাখ টাকার চামড়া পচে গেছে।
তবে লবণ ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির কথা অস্বীকার করেছেন মদিনা সল্টের স্বত্বাধিকারী জামিল আহম্মেদ। তিনি বলেন, এবার আড়াই হাজার বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে। এরপরও লবণ কিনতে আসেন চামড়ার আড়তদাররা। আমরা এত লবণ কোথায় পাবো? এরপরও চাহিদা বিবেচনায় ঈদের দিন অতিরিক্ত ট্রাক ও লেবার ভাড়া দিয়ে লবণ তোলা হয়েছে। বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও বেশি দামে বলে জানান তিনি।
এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে প্রায় দুই লাখ টন লবণের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, কাঁচা চামড়ায় সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়, কিন্তু অনেকে এখন পর্যন্তও দিতে পারেননি। একটা গরুর চামড়ায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) হিসাবে দেখা গেছে, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বিসিক বলছে, এবারো লবণ মৌসুম (নভেম্বর থেকে মে) শেষে দেশে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টন লবণ উত্পাদন হয়েছে। আর আগের মৌসুমের আড়াই লাখ টন লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে লবণের চাহিদা এক লাখ ৩৫ হাজার টন। এ বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট চাহিদা বাদ দিয়ে দেশে ১২ লাখ ৩ হাজার টন লবণ মজুদ থাকবে।
সম্প্রতি কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। তবে সে দাবি নাকচ করে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলছেন, শিল্প রক্ষার কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করলে দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। চামড়া বাংলাদেশের পাঁচটি রপ্তানি খাতের মধ্যে অন্যতম। গেল বছর চামড়াকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। সম্ভাবনাময় এ খাত যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার সতর্ক।