সুমন হত্যার বিচার ও ২৫০০ এর বিরূদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই
গ্রেফতার, গুম, নির্যাতন ও ছাঁটাই রুখে দাঁড়াও
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি
আজ ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে –মজুরী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সুমন হত্যার, ২৫০০ শ্রমিকের বিরূদ্ধে মামলা এবং বিভিন্ন কারখানা থেকে ছাঁটাই ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ৪ টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার, সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারী সংহতির সভাপ্রধান শ্যামলী শীল, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের নেতা ফিরোজ আহমেদ এবং ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, লেখক-গবেষক কল্লোল মোস্তাফা, ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহজাদ এস আরেফীন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জানুয়ারি মাসে বেতন পাবার পর থেকেই সকল গ্রেডে সমান হারে মজুরী বৃদ্ধি ও সমন্বয়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো পোশাক শ্রমিকরা। গাজীপুর, উত্তরা, মীরপুর, হেমায়েতপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন শ্রমিক অঞ্চলে শ্রমিকরা মাঠে নামে। ঐ আন্দোলনেই পুলিশ পোশাক শ্রমিক সুমন মিয়ার বুকে গুলি চালায়। নেতৃবৃন্দ, নতুন সরকারের আমলে প্রথম গুলি পোশাক শ্রমিকের বুকে করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা, অবিলম্বে সুমন মিয়ার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
তারা বলেন, মজুরী সমন্বয়হীনতা সরকার ও মালিকের গাফিলতির কারণে হয়েছে যা তারা স্বীকারও করেছে। অথচ তার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপানো হচ্ছে। মালিক ও সরকার পক্ষের দায়িত্বশীলতার অভাবের কারণেই শ্রমিকরা ভোগান্তির শিকার হয়েছে। তারা বলেন, মজুরি যেভাবে সমন্বয় করা হয়েছে তাতে ১৫ টাকা ২০ টাকা ১০৫ টাকা এইভাবে যে বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে শ্রমিকদের প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি সমন্বয় করা হয়নি।
তারা বলেন, একদিকে মজুরী সমন্বয়ের নামে প্রহসন অন্যদিকে শ্রমিকরা কাজে ফেরত যাবার পর পরই প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের বিরূদ্ধে নামে বেনামে মামলা করা হয়েছে। শুধু মামলা নয় প্রায় ২০ জন শ্রমিক নেতা ও সাধারণ শ্রমিক গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলা এবং গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, নামে বেনামে মামলা করে শ্রমিকাঞ্চলে ভীতি তৈরী করা হয়েছে। শ্রমিকরা নিজ অঞ্চলে থাকতে ভয় পাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় মাস্তান এবং পুলিশও শ্রমিকদের নানা ভয় হুমকী প্রদান করছে। অবিলম্বে শ্রমিকদের বিরূদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। একইসাথে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মুক্তি দাবি করেন তারা। তারা বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে শ্রমিকদের ট্রেডইউনিয়নের অধিকার না দিয়ে দমন পীড়ন করে শ্রমিক আন্দোলন এবং শ্রমিকদের শায়েস্তা করার পথ বাছাই শিল্প বিকাশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে না। দালাল নেতা বাদ দিয়ে প্রকৃত শ্রমিক নেতাদের অধীনে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন করার আহবান জানান শ্রমিকদের নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমানে আশুলিয়া সাভারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন পরবর্তীতে শ্রমিকদের ব্যাপকহারে ছাঁটাই করা হচ্ছে। নীট এশিয়া, আল গাউসিয়, হলিউড গার্মেন্ট, প্রোডিউসার, এফএন অ্যাপারেরসহ আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া গেছে। একইসাথে শ্রমিকদের ছবি নামসহ আসামীর মতো বিভিন্ন কারখানার দেয়ালে লাগানো হচ্ছে। এবং অন্যান্য কারখানায়ও পাঠানো হচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে। শ্রমিকরা চাকুরী চ্যুত হয়ে তারা যেমন যথাযথভাবে ছাঁটাই বেনীফিট পাচ্ছে না তেমনি এক কারখানার কাছাকাছি অন্যকারখানায় কাজ পাওয়ায় কঠিন হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, মজুরি বৈষম্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন-এ শ্রমিক নির্যাতন, হামলা, গ্রেফতার গুলি বন্ধ করে সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষে শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে মালিক ও সরকারপক্ষকে আহবান করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, পোশাক খাত বাংলাদেশর অর্থনীতির প্রাণ। আর এই খাতের মূল শক্তি পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিকরা যাতে গ্রেডিং বৈষম্যের স্বীকার না হন বরং যথাযথ মজুরি পান সেটা দেখার দায়িত্ব মালিক এবং সরকারের। শিল্প রক্ষা ও উৎপাদনশীলতার স্বার্থেই শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি।