ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, শনিবার রাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাসায় নৈশভোজে গিয়েছিলেন। তিনি বের হলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর এই হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার শামিল। এই হামলায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। আমরা এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কথোপকথন ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা অপরাধ কোথায়? সমস্ত দেশই তো তাদের পক্ষে। আমরা আগেই শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলাম। শিক্ষণীয় আন্দোলন করছে তারা। দেশের সকল রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, বুদ্ধিজীবী সবাই বলছে যৌক্তিক। তবে তার (আমির খসরু) কথা বিকৃত করে ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এখন তো সবই করা যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার (আমির খসরুর) কথোপকথন জের ধরে রাতে দুই বার অভিযান চালানো হয়েছে তাকে গ্রেফতার করা জন্য। কিন্তু কেন?, তিনি তো সাবেক মন্ত্রী। এটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে। এগুলো সবই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর অভিযানের শামিল। বিএনপিকে নিয়ে গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে ভাষায় কথা বলছে, এটি শুধু মাত্র আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, গতকাল ধানমন্ডিতে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। সারাদেশেই হামলা চালিয়েছে তারা। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত স্বৈরাচারী সন্ত্রাসী দল। তাদের কাছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের কোনো মূল্য নেই।
‘এবার পালা বড়দের’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জাতির চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বড়দের একটা শিক্ষা হয়েছে। এখন সরকার হটাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বড়দেরই মাঠে নেমে আসতে হবে।এবার বড়দের পালা।
তিনি বলেন, অতীতেও সরকার আন্দোলন ভিন্নখাতে নিতে বিএনপিকে জড়িয়েছে বক্তব্য দিয়েছে। এবারও একই পন্থা বেছে নিয়েছে। মূলত তারা দেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক আইনজীবী, কূটনীতিক, পেশাজীবী কেউ এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। তাই আমি দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, মানুষকে বোকা বানানো সরকারের স্বভাবজাত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমরা দেখেছি সরকার প্রধান পার্লামেন্ট দাঁড়িয়ে বলছেন, সকল কোটা বাতিল, পরে তিনি বললেন, এটা হাইকোর্টের রায় আছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা সম্ভব নয়, অর্থাৎ তিনি ছাত্রদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তাই ছাত্ররা সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছে না। জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ এই বিশ্বাসযোগতা তারা হারিয়ে ফেলেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই ব্যর্থতা শুধু পরিবহন সেক্টরে না, রাষ্ট্রের প্রতিটা ক্ষেত্রে এই সরকারের ব্যর্থতা। দেশে কোন পার্লামেন্ট নেই, কমিশন প্রশাসন শুরু করে জুডিশিয়ালসহ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করেছে। আর এসব কিছু হয়েছে পুলিশি সহায়তায়। দেশে কি হবে না হবে সকল কিছু নির্ধারণ করছে নিজেরা নিজেরাই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।