শিক্ষার্থীদের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস, যুবকদের লাঠিপেটা

0
18

ডেস্ক রিপোর্ট : হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর জিগাতলা এলাকা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। মিছিলে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিছু শিক্ষার্থীকেও দেখা গেছে। তবে তাদের চেয়ে বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে হামলা চালায় কিছু যুবক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আহত হন। বার্তা সংস্থা এপির ফটোসাংবাদিক এম এন আহাদ আহত হন। তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আজ বেলা একটার দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান তুলে জিগাতলার দিকে মিছিল নিয়ে যায়। ওই সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। মোট ২৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে অনেক শিক্ষার্থী লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাড়ে দাঁড়িয়ে ওই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও ঢিল ছোড়ে। কয়েকজনকে পানি থেকে টেনে তোলে পুলিশ। ওই সময় তিন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

এ ছাড়া জিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের দিকে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। অনেকে নির্মাণাধীন ভবনগুলোয় আশ্রয় নেয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন সীমান্ত স্কয়ারের দিকে অবস্থান করছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এই মিছিল আজ বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে জিগাতলায় আসে।

নিরাপদ সড়ক, গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ—এই তিন দাবি নিয়ে পূর্বঘোষণা অনুসারে মিছিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী ও ব্যবসায় অনুষদভুক্ত কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলায় মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। পরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সেই মিছিল সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগে এসে জড়ো হয়। এই মিছিলটি সায়েন্স ল্যাব হয়ে জিগাতলার দিকে যায়।

এই মিছিলের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন জানান, জিগাতলায় তাঁদের অবস্থানের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁরা জিগাতলা থেকে ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। জিগাতলায় মিছিল থেকে একটি অংশ পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। ওই সময় জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিলটি ইউ টার্ন নেওয়ার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া শুরু করে।

জিগাতলা ও ধানমন্ডির গলিতে গলিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ের আশপাশের গলিতে যেসব শিক্ষার্থী ছুটোছুটি করছিল, তাদের লাঠি হাতে ধাওয়া করতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের।
জিগাতলা এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গেটের সামনে শ খানিক বিজিবি সদস্য অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে ধানমন্ডি ২ নম্বরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে জমায়েত হওয়ার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। তাঁরা সেখানে জড়ো হলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এতে জমায়েতটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে সীমান্ত স্কয়ারের সামনে থেকে একটি মিছিল ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়।

বেলা ২টা ৮ মিনিটের দিকে ধানমন্ডি ১ নম্বরে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে নিয়ে যুবকেরা হামলা চালায়। এতে ছাত্রীসহ তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে জানান।

এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এখন রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। বেশ কিছু নেতা–কর্মী কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন।

পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, মিছিলকারীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাচ্ছিল। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা শোনেনি। তিনি বলেন, সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে