ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদুল আজহায় বাড়ি ফিরতে অনেকে ‘যুদ্ধ’ করে বাসের অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন। আবার অনেকে চেষ্টা করেও যোগাড় করতে পারেননি সেই কাঙ্ক্ষিত টিকিট। তাই ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাসের টিকিট কম, কিন্তু চাহিদা বেশি। সবাইকে এত টিকিট দেওয়া সম্ভব না। অগ্রিম টিকিট যা ছিল, তা ইতোমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।
তবে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, মূলত বেশি মুনাফার আশায় নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট মজুদ রেখেছে বাস কাউন্টারগুলো। সেটা ঈদের দুই দিন আগে বেশি দামে বিক্রি করা হবে। কারণ ঈদের আগে পরিবহন পাওয়া যায় না, তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে টিকিট কিনেন যাত্রীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাস কোম্পানির সেলস এক্সিকিউটিভ জানান, ঈদে বাড়তি মুনাফার আশায় থাকে পরিবহন কোম্পানিগুলো। এজন্যই মূলত টিকিট সংকট তৈরি করা হয়।
গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাস কাউন্টারে ১৯ আগস্টের টিকিটের জন্য এসেছিলেন ইডেন সরকারি মহিলা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নূরে জান্নাত ফেরদৌসী। টিকিট না কিনতে পেরে অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরলেন। তিনি বলেন, ‘বাসের অগ্রিম টিকিট কেনার জন্য কয়েক দিনই কাউন্টারে এসেছি, কিন্তু কোনো পরিবহনেরই টিকিট নেই।’ টিকিট না পাওয়ায় এ ঈদে বাড়ি ফেরার আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার এ বাসিন্দা। শুধু ফেরদৌসীই নন, এবার নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা হবে না— এমন আশঙ্কা রাজধানীর অনেক মানুষেরই। কারণ একটাই, বাসের টিকিট মিলছে না।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৭ আগস্ট থেকে রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর ও মহাখালী টার্মিনালে ১৬-২১ আগস্টের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো। তবে ১৬ থেকে ২০ আগস্টের টিকিট দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৪ ও ১৫ আগস্টেরও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। গত শুক্রবার ১০ আগস্ট ১৪ ও ১৫ আগস্টের সকল টিকিট বিক্রি করা হয়। সরাসরি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি ছাড়াও অনলাইনে সহজ ডটকমের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পর্যন্ত সবগুলো পরিবহন কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি করেছে, সেই তথ্য দিতে রাজি নন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে বাড়ি ফেরার জন্য লোকজন এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। কিন্তু কোথাও কোনো টিকিট নেই। বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিটের জন্য কাকুতি মিনতি করছেন, কিন্তু বিভিন্ন পরিবহনের সেলস এক্সিকিউটিভরা অপারগতা প্রকাশ করে বলছেন, টিকিট শেষ, তাই তাদের কিছুই করার নেই। হতাশ হয়েই বাসায় ফিরছেন অনেক লোক।
রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গ্রিন লাইন পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, গত শনিবার থেকেই গ্রিন লাইনের ঈদের বাস সার্ভিস শুরু হয়েছে। গত ২০ জুলাই থেকে তারা মূলত ঈদুল আজহার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে। অনেক আগেই তাদের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে বলে জানালেন কাউন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘টিকিটের চাহিদা অনেক কিন্তু আমরা সেটা পূরণ করতে পারছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, বিআরটিসি, নাবিল পরিবহন ও এসআর ট্রাভেলসহ সবগুলো পরিবহন রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সবকটি জেলায় ঈদে যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ করেছে। এ ছাড়া গ্রিন লাইন ও লন্ডন এক্সপ্রেসের ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, ঢাকা-বেনাপোল-কলকাতা, ইউনিক পরিবহন ও এনা ট্রান্সপোর্টের ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-বান্দরবান রুটের সকল টিকিট ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে কথা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা আবু সাদ সোহাইলের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের আগে বেশি দামে টিকিট বিক্রির জন্য সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, দিনাজপুর যাওয়ার জন্য গত ২ দিন ধরে বাস কাউন্টারে ঘুরছি। কিন্তু কোথাও কোনো টিকিট নেই। শুধু কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে এই চিত্র নয়, রাজধানীর অন্য বাস টার্মিনালগুলো ঘুরেও এ চিত্র দেখা গেছে। টিকিট না পাওয়ায় হতাশার ছাপ দেখা গেছে অনেকের মাঝে।
ঈদে টিকিটের চাহিদা কেমন জানতে চাইলে কল্যাণপুর শ্যামলী বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চাহিদা তো প্রচুর কিন্তু আমরা কীভাবে এত টিকিট দিব? মানুষের তুলনায় গাড়ি তো কম। নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’
সোহাগ পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. সাঈফুজ্জামান বলেন, আমাদের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। একই কথা জানান উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী নাবিল এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক সামি আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা সব টিকিট অনলাইনের মাধ্যমেই বিক্রি সম্পন্ন করেছি। এদিকে গতকাল ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রিও শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।