পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আগাম পণ্য আমদানি শুরু করেছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। কারও পণ্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রামমুখী জাহাজে রয়েছে। কেউ কেউ বাড়তি সময় হাতে নিয়ে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজজটের কারণে এবার একটু আগেভাগেই পণ্য আমদানি শুরু করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
- বাজার ধরতে প্রস্তুতি।
- চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটের কারণে পণ্য খালাসে সময় বেশি লাগছে।
- তাই ব্যবসায়ীরা এ বছর আগেভাগেই পণ্য আমদানি করছেন।
- এ বছর রোজা শুরু হতে পারে ১৭ মে।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আগাম পণ্য আমদানি শুরু করেছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। কারও পণ্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রামমুখী জাহাজে রয়েছে। কেউ কেউ বাড়তি সময় হাতে নিয়ে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজজটের কারণে এবার একটু আগেভাগেই পণ্য আমদানি শুরু করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
এ বছর রোজা শুরু হতে পারে ১৭ মে। ফলে এখনো বাকি ৭২ দিন। তবে রোজার বাজার ধরতে সময় নেই আমদানিকারকদের হাতে। খাতুনগঞ্জে চলছে রোজার প্রস্তুতি। পাইকারি পর্যায়ে এখনো রোজার পণ্য বেচাকেনা শুরু হয়নি। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ব্যাপক ব্যস্ত। গতকাল মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোতে সরেজমিনে এমন তৎপরতা চোখে পড়েছে।
এত আগে পণ্য আমদানি নিয়ে জানতে চাইলে একাধিক আমদানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে জটের কারণে এখন পণ্য হাতে পেতে সময় লাগছে বেশি। এর মধ্যে লাইটার সংকটের কারণে এখন বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করতেই দেড়-দুই মাস সময় লেগে যায়। আবার কনটেইনারে পণ্য আমদানিতেও বাড়তি সময় লাগছে। রোজার দেড় থেকে দুই মাস আগে আমদানিকারকের হাতে পণ্য এসে না পৌঁছালে রোজার বাজার হারানোর শঙ্কা রয়েছে। এ জন্যই আগেভাগে আমদানি শুরু করেছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের আমদানির এই তৎপরতা প্রথম দেখা গেল খাতুনগঞ্জে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। কয়েকটি ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেল পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার ব্যস্ততা। ওয়ান ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন বলেন, খেজুর, ছোলা, মসুর, মটর ডালসহ রোজার নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকেই। তাঁদের শাখা থেকে রোজার বহুল ব্যবহৃত পণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
কাস্টমস ও বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, খাতুনগঞ্জের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ভোগ্যপণ্যের ৪০ শতাংশ আমদানি করেন। সারা দেশের ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি খালাস হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী, ছোলা আমদানির ৮০ শতাংশই করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। মসুর ডালের ৫৩ শতাংশই আমদানি করেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। মটর ডালের ৬০ শতাংশই আমদানি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে চিনি ও ভোজ্যতেলের বড় অংশ আমদানি করেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা।
খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে রোজায়। খাতুনগঞ্জের পাশে আছদগঞ্জের অনেক ব্যবসায়ী এই খেজুর আমদানি করেন। এ সম্পর্কে জানতে আছদগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে নিয়ে জানা গেল, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফারুক আহমেদ খেজুর আমদানি প্রক্রিয়া তদারকি করতে নিজেই দুবাইয়ে গেছেন। হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুবাইয়ের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইরাক, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও দুবাই থেকে ৭৫ কনটেইনার খেজুর আমদানি করছেন তিনি। এর মধ্যে আলজেরিয়ার আলজের বন্দরে ২০ কনটেইনার খেজুর জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে। এসব খেজুর দুবাই হয়ে কলম্বো বন্দরে প্রথমে আনা হবে। এরপর চট্টগ্রামমুখী জাহাজে তুলে দেওয়া হবে।
খেজুরের পাশাপাশি রোজায় বেশি বেচাকেনা হয় ছোলা, মটর, মসুর ডালের। ডালজাতীয় পণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের বিএসএম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার পর বিদেশের বন্দরে জাহাজে আমদানি পণ্য বোঝাই হতে সময় লাগে ২০-২২ দিন। এরপর দেশভেদে রোজার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে ১৫ দিন থেকে এক মাস লাগে। এখানে আসার পর বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে খালাস শেষ করতে দেড়-দুই মাস সময় লাগে। এসব বিবেচনায় রেখে আমদানি শুরু করেছি।’
বন্দরের কারণে এখনই বাজার ধরতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ছোট পর্যায়ের আমদানিকারকেরা। খাতুনগঞ্জের এনটিটি এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সঞ্জয় দেবের শঙ্কাটা একটু বেশি। তিনি বলেন, ‘রোজায় অল্প পরিমাণে ছোলা ও ডালজাতীয় পণ্য আমদানি করি। গতবার পণ্য এনে বন্দরের জটের কারণে রোজার বাজারে বেচাকেনা করতে পারিনি। এবার ঋণপত্র এখনো খুলিনি। দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। বন্দরের কারণে যদি সময়মতো পণ্য হাতে না পাই তাহলে তো লোকসানে পড়তে হবে।’
রোজার সময় চিনি ও ভোজ্যতেলের বেচাকেনাও বাড়ে। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে সময় কম লাগে। চিনি আমদানির বেশির ভাগ হয় ব্রাজিল থেকে। তাই চিনি আমদানিতে সময় লাগে বেশি। এ দুটো পণ্যবোঝাই জাহাজ আসতে শুরু করেছে বন্দরে।
খাতুনগঞ্জের বাদশা মার্কেটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার শাহেদ উল আলম বলেন, রোজায় যেসব পণ্য বেশি চলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব কটির দাম স্থিতিশীল আছে । তবে বিশ্ববাজার অনুকূলে থাকলেও পণ্য আমদানির সঙ্গে যুক্ত এখানকার অনেক কিছুই অনুকূলে নেই। যেমন টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বেশি, বন্দরে পণ্য খালাসে সময় লাগায় ক্ষতিপূরণ বাবদ বাড়তি খরচ, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ অনেক কিছুই প্রতিকূলে।
যোগাযোগ করা হলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত বছর রোজার আগে অনেক ব্যবসায়ী বন্দরের জটের কারণে সময়মতো পণ্য হাতে পাননি। ফলে তাঁরা রোজার বাজারও ধরতে পারেননি। এ কারণে এবার আগেভাগেই আমদানি শুরু করতে হয়েছে। পণ্য আমদানি রোজার চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা এখন থেকেই নজরে রাখা দরকার, যাতে রোজার সময় নিত্যপণ্যের কোনো ঘাটতি না থাকে।