ÒA World of Three ZerosÓ -এর জাপানী সংস্করণ উদ্বোধন করতে প্রফেসর ইউনূসের জাপান সফর
নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গত সপ্তাহে জাপান সফর করেন যেখানে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন। তাঁর সফরের প্রথম দিনে তিনি “বিজুকু’র ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ÒA World of Three ZerosÓ -এর প্রকাশনা উদ্যাপনের জন্য কিয়োটো আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। তাঁর ভাষণ সরাসরি শোনার জন্য এবং নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে সমাজকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ নিয়ে কথা বলতে কিয়োটো আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন জাপানের ১,১০০ প্রশিক্ষণার্থী মেকাপ শিল্পী ও তাঁদের প্রশিক্ষকগণ। সম্মেলনের আয়োজকদের পক্ষে প্রশিক্ষণ স্কুল “বিজুকু”-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মি. হিরোশি উচিদা জানান যে, নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে অনেক জাপানী নারীই হীনমন্যতায় ভোগেন। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৭,০০০-এর বেশী মহিলাকে প্রশিক্ষিত করার জন্য প্রফেসর ইউনূস স্কুলটির প্রেসিডেন্ট মি. উচিদাকে অভিনন্দন জানান। তিনি দেশের বাইরেও তাঁদের এই সেবা সম্প্রসারিত করতে তাঁদেরকে উৎসাহিত করেন। যে সকল দেশে মানসম্মত বিউটি পার্লারের চাহিদা প্রতিদিন বাড়ছে বাংলাদেশ তাদের একটি। বাংলাদেশে নবীন উদ্যোক্তা কর্মসূচির মাধ্যমে অনেক সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলারা গ্রামাঞ্চলে বিউটি পার্লার পরিচালনা করছেন।
ঐ দিনই প্রফেসর ইউনূস কিয়োটো নগরীর মেয়র মি. দাইসাকু কাদোকাওয়ার সাথে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। নগরীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। মেয়র মিডিয়ার উপস্থিতিতে প্রফেসর ইউনূসকে কিয়োটো নগরীতে স্বাগত জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সম্মাননাপত্র পাঠ করেন যেখানে তিনি প্রফেসর ইউনূসের কর্ম ও সৃষ্ট উদাহরণ থেকে তাঁর নগরীর শিক্ষা গ্রহণ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিগণের অংশগ্রহণে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বৈঠকে কিয়োটোকে কীভাবে সামাজিক ব্যবসা নগরীতে পরিণত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রফেসর ইউনূস ঐ দিনই তাঁর আদর্শে সামাজিক ব্যবসার সাথে ইতোমধ্যে যুক্ত অথবা সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী এমন প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে “কর্পোরেট ব্যবসা পরিকল্পনায় সামাজিক ব্যবসাকে কীভাবে অন্তর্ভূক্ত করা যায়” শীর্ষক একটি বিশেষ বক্তৃতা দেন।
২৫ মার্চ প্রফেসর ইউনূস কিয়োটো আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অ্যানেক্স হলে “বৈশ্বিক ভবিষ্যত – সামাজিকভাবে সচেতন উচ্চাশা দিয়ে কীভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়” শীর্ষক এক বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তব্য শুনতে জড়ো হয়েছিল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ ছাত্র এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত শীকি কমিউনিটি নেটওয়ার্কের অধীনস্ত বিভিন্ন স্কুলের ২০,০০০ ছাত্র। এরপর তিনি “একবিংশ শতাব্দীতে টিকে থাকার লক্ষ্যে সামাজিক ব্যবসায়ে রূপান্তর” শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
ইউনাইটেড নেশন ইউনিভার্সিটি, টোকিওতে তাঁর ÒA World of Three ZerosÓ -এর উপর মূল বক্তৃতা শুনতে জড়ো হন ৩০০ ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নবীন উদ্যোক্তা। প্রফেসর ইউনূস জাপান ও ভারতের বিভিন্ন বিশেষায়িত ক্ষেত্র থেকে আগত সামাজিকভাবে সচেতন তরুণ নেতাদের সাথে বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থাকে একটি “তিন শূন্য”র পৃথিবীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে তারা কীভাবে একযোগে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
পরদিন নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস টোকিওর আকাসাকায় অবস্থিত আর্ক মোরি ভবনে উরা-সেনকে -এর মাস্টার সেন সুসিৎসু এর সাথে বৈঠক করেন। এটি ছিল প্রফেসর ইউনূস এবং ইউনেস্কোর শুভেচ্ছা দূত সেন চেনসিৎসুর এর মধ্যে একটি সাক্ষাৎকারধর্মী আলোচনা।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস হিরোশিমা সফর করেন এবং হিরোশিমা নগরীর মেয়র ও হিরোশিমা এলাকার গভর্ণরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর নতুন গ্রন্থটির জাপানী অনুবাদ প্রকাশ উপলক্ষে তিনি হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন “ডিস্টিংগুইশ্ড প্রফেসর” হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাঁর হিরোশিমা সফরকালে প্রফেসর ইউনূস হিরোশিমা পীস মেমোরিয়াল পার্কে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে পারমাণবিক বোমাবর্ষণে নিহত হাজার হাজার হিরোশিমাবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাঁকে হিরোশিমা শান্তি কেন্দ্রের “সম্মানিত উপদেষ্টা”হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস জাপানের ইয়োশিমোতো কোজিও কোং লিঃ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত “ইউনূস ফ্যামিলি কনফারেন্স”-এ প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন যেখানে জাপানের বিভিন্ন এলাকা থেকে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা ও সামাজিক ব্যবসায়ে উৎসাহী ব্যক্তিরা যোগ দেন। তিনি সম্মেলনে নতুন জাপানী সামাজিক ব্যবসা জয়েন্ট ভেঞ্চার “ইউনূস ইয়োশিমোতো সোশ্যাল অ্যাকশন” আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ইয়োশিমোতো কোজিও কোং লিঃ ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাপানের অন্যতম এন্টারটেইনমেন্ট কনগ্লোমারেট। নতুন এই সামাজিক ব্যবসাটি জাপানে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন একাকীত্ব, বিষন্নতা ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে কাজ করবে।
তাঁর সফরকালে জাপানের বৃহত্তম সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে প্রফেসর ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার ধারণ করে যেখানে তাঁর জীবন ও কর্ম বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। সাক্ষাৎকারটি এনএইচকে-র সন্ধাকালীন সংবাদে প্রচারিত হয়। আসাহি শিমবুন ও জাপান টাইমস সহ জাপানের সকল গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় তাঁর সফরের সংবাদ প্রচারিত হয়।